প্রকাশিত: Sat, Apr 20, 2024 1:49 PM
আপডেট: Sun, May 19, 2024 7:53 AM

‘দেয়ালের দেশ’ : মনস্তাত্তি¡ক যতো দেয়াল

রহমান মতি : এ এক অদ্ভুত ছবি! অন্যভাবে গল্প বলা ছবি। কতদিন এমন অন্যভাবে গল্প বলা ছবি দেখিনি। ভালোবাসলে কতভাবে বাসা যায়। সজীব দেহেও বাসা যায়, নিথর দেহেও বাসা যায়। কোনটা বেশি শক্তিশালী সে প্রশ্নে যাওয়া জরুরি না, জরুরি ভালোবাসার প্রকাশটাতে। ভালোবাসার যত প্রকাশ তার সামনে যত দেয়াল মনস্তাত্তি¡কভাবে তাকেই একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা চলচ্চিত্র ‘দেয়ালের দেশ’। মিশুক মনি। আর্লি স্টেজেই একজন নির্মাতা এক সাবলীল, শিল্পিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দেখাচ্ছেন এটা চারটিখানি কথা নয়। তার কাজ দেখে মনে হবে অনেকগুলো চলচ্চিত্র বানিয়েছেন এমন পরিণত। করতালি তার জন্য দেয়াই যায়। 

‘শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে, কাল রাতে ফালগুনের রাতের আঁধারে, যখন গিয়াছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’। ছবির শুরুটা জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আট বছর আগের একদিন’ এর শুরুর এ লাইনগুলো দিয়ে বলা যেতেই পারে। লাশকাটা ঘর থেকে রাজপথ, ঘর, নগরীর নানা মোড়ে মোড়ে শরিফুল রাজ তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে অন্যভাবে উপস্থিত। যেভাবে উপস্থিত তার মর্ম বাইরের কেউ বুঝবে না শুধু সে ছাড়া। তার সামনে দেয়াল অনেক মনের, বাইরের, সমাজের, জীবনের, মৃত্যুর সম্ভবত আরো কিছুর। প্যারালাল দুটি আবহে ছবির গল্পের এগিয়ে চলা। রাজ-বুবলির ভালোবাসার মুহূর্তগুলো, দুজনের রাগ, খুনসুটি, রোমান্টিকতার মুহূর্তগুলো অন্যদিকে নিঃশব্দে থাকা অপলক বুবলির সাথে রাজের কাটানো অদ্ভুত ভালোবাসার মুহূর্তগুলো। 

হতে পারে এর কোনো মানে নেই অনেকের কাছে কিন্তু রাজের  কাছে আছে। পুলিশের বলা সেই সংলাপটি রাজের ভালোবাসার মর্মার্থ বুঝিয়ে দেয় ‘বুঝলা বৈশাখ, যুদ্ধ আর ভালোবাসার মধ্যে সব ঠিক’। বৈশাখ আর নহর ছবির দুই প্রধান চরিত্রের নামকরণ। এ নামকরণটিও আকর্ষণ করার মতো। একজন নির্মাতা তার ছবির চরিত্রের নামেও রুচিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এটাও তার ভালো ছবি নির্মাণের একটা সাইন। ছবির সেরা অভিনয়টা কে করেছে? রাজের নাম অনেক উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু খুব সূ²ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে শবনম বুবলীকেই মনে হয়। প্যারালালি দুটি চরিত্রে তাকে অভিনয় করতে হয়েছে। তার সাইলেন্ট অ্যাকটিং, বিবর্ণ নিথর চোখের চাহনির গভীরতা অনেক বেশি নোটিশ করার মতো। 

রাজ তার চরিত্রে ঢুকে অভিনয় করেছে, কথা বলেছে এবং অনবদ্য তার চরিত্রে কিন্তু কথা বলে এবং না বলে বুবলী যেন অনেক কথাই বলে গেছে অভিনয়ের মাধ্যমে। তাদের বাইরে অন্যান্য চরিত্রগুলো ছিল প্রয়োজনমাফিক, তাদের চরিত্রকে দাঁড় করানোর সহায়ক মাত্র। ‘বেঁচে যাওয়া ভালোবাসা’র মতো গানে, চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফিতে, বিজিএমে মিশুক মনি ছবির কারিগরি দিকেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ঈদের বাজারে পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল ছবি ছাড়া দর্শক ছবি দেখে না এরকম ট্যাবুকে ভেঙে দিতেও ‘দেয়ালের দেশ’ কার্যকরী ছবি। এদেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রির গুণগত পরিবর্তনের জন্য এরকম আরো ছবি ভ‚মিকা রাখবে। রেটিং-৮/১০। ফেসবুক থেকে